শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
# লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ, # ফলনও বাম্পার হয়েছে, # দাম বাড়ার আশঙ্কা
রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলার বিভিন্ন স্থানে লাভের আশায় সময়ের আগেই অপরিপক্ক আলু তুলছেন চাষিরা। তারা বেশি লাভের আশায় মৌসুম শেষের আগেই এ আলু ক্ষেত থেকে তুলছেন এবং সেই আলু ক্ষেতেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বিভিন্ন স্থানে চাষিরা আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অপরিপক্ক আলু তোলার কারণে চলতি মৌসুমে হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু সংরক্ষণ নিয়ে সংশয় দেখছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ। আর হিমাগারে আলু না রাখলে আলুর দাম আগামীতে আরও বাড়বে বলে তারা মনে করেন। কৃষি বিভাগ বলছে, রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলা ও রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার বিভিন্ন স্থানে লাভের আশায় আলু চাষিরা অপরিপক্ক আলু তুলছেন। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলা ও রংপুর অঞ্চলের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং রংপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে ২ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেড়েছে। এ বছর রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৭ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছিল। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আলু তোলা হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, রংপুরসহ সারাদেশে দেশি ও উচ্চফলনশীল দুই জাতের আলুই চাষ করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি আলুর গড় ফলন ১১ টন। আলুর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ২০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তবে চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে লাভের আশায় আলু চাষিরা অপরিপক্ক আলু তুলছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে আলু উৎপাদনে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে রংপুর অঞ্চলে। এবার আলুর বাম্পার ফলনও হয়েছে। এতে চাষিরা খুবই খুশি। তবে মাঝে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট বøাইটের শঙ্কা দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত কোথাও তেমন ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও চাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর বর্তমান বাজার অনুযায়ী আলু তোলার খরচসহ প্রতি বিঘায় ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাগবে। তাতে লোকসান হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে আলু চাষি এই পরিমাণ জমিতে লাভ করেছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাই লাভের আশায় চাষিরা অপরিপক্ক আলু তুলছেন এবং বিক্রি করছেন। রংপুর নগরীর খোর্দ্দ তামপাটের চাষি সিরাজুল ইসলাম শিকদার বলেন, এবার ৩বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। তার মধ্যে দুই বিঘার আলু তুল বিক্রি করছি। গত বছর আলু ক্ষেত থেকে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে ৫০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে হয়েছে। সেই তুলনায় এবারে আলুর ক্ষেতেই ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাচ্ছে। তবে লোকসানের সম্ভাবনা নেই বলেই তিনি জানান। বরং লাভ হচ্ছে।
সদরের জানকী রামজীবন এলাকার মনজুরুল ইসলাম বলেন, আলুর দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে, তবে গত বারের তুলনায় এবারে খরচও বাড়ছে। আলু তোলার শ্রমিকরা এবারে বেশি টাকা নিচ্ছেন। তারপরও লাভ হবে বলে তিনি জানান। তার মতো নগরীর তামপাট, সদরের পালিচড়া, শ্যামপুর ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কয়েকজন চাষি একই কথা জানান।